February 9, 2025

TV Bangla New Agency

Just another WordPress site

কাজ হারিয়েছেন স্বামী, পরিবারকে সাহারা দিতে টোটো চালকের ভূমিকায় স্ত্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা পূর্ব মেদিনীপুর:– লকডাউন এ কাজ হারিয়েছেন স্বামী। অসহায় পরিবারকে তাই সাহারা দিতে টোটো চালকের ভূমিকায় স্ত্রী নিয়তি বর্মন। আর পাঁচটা ধরনের থেকে একটু আলাদা জীবনযাপন। নন্দকুমার থানার বরগোদার গোদা এলাকার বাসিন্দা। স্বামী অরুণ কুমার বর্মন পেশায় ভ্যান চালক। তিন মেয়ে ও শাশুড়ি মাকে নিয়ে ছোট্ট এক চিলতে কুড়ে বাড়িতেই অভাবের সংসার। তারপর আবার ভ্যান চালক মদ্যপ স্বামীর অত্যাচার কম কিছু ছিল না। স্বভাবতই দিন আনি দিন খাই সংসারে ঝামেলা ঝঞ্ঝাট দিন দিন লেগেই থাকত। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হত নিয়তিকে। এরপর আবার লকডাউন এর খাড়া চরম বিপদ ডেকে আনে নন্দকুমারের এই বর্মন পরিবারে। এমনিতেই বড় মেয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। স্থানীয় একটি স্কুলে বাকি দুই মেয়ে ও নবম ও ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। কাজেই সংসারের হাল সামলে তিন মেয়ের পড়াশোনার খরচ বহর সামলানো কম কিছু নয়। এমন অবস্থায় তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে টোটো চালকের কাজ নিয়েছেন নিয়তি দেবী। প্রতিদিনই তাই এখন ভোর থেকে উঠে সংসারের কাজ সামলানোর পর সাড়ে ছটায় টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়া। দুপুরে খাবার সময় একটু খুইজা একটু জিরিয়ে নেওয়া। তারপর আবার সেই টোটো নিয়েই সন্ধ্যা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন। ঠেকুয়া পুরশাঘাট থেকে শুরু করে একেবারে তমলুক নিমতৌড়ি জেলা শাসকের দপ্তর। এখন এই রুটি দাপিয়ে টোটো চালাচ্ছেন নিয়তি দেবী। আর তা থেকেই প্রতিদিন যা আয় হয়, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করে সংসারের খরচ যোগান দেওয়া। সংসারের কথা ভেবে হাসিমুখেই তা মেনে নিয়েছেন নিয়তি। তিনি জানান, অভাবের সংসার চালাতে অন্যের বাড়িতে কাজ নিয়ে ছিলাম পরিচালিকার। কিন্তু তাতেও সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে বছর দুয়েক আগেই একমাত্র ভাগনাকে স্বনির্ভর করে তুলতে ব্যাংকের ঋণ নিয়ে নতুন একটি টোটো কেন হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই ভাগ্নি উত্তরপ্রদেশে নিজের বাড়িতে ফিরে যায় সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। অগত্যা তাই নিজেই ব্যাংকের ঋণ শোধ করার জন্য টোটো চালাতে শুরু করি। তাই আজ রোদে জলে পুড়ে কষ্ট হলেও ব্যাংকের ঋণ শোধ করে সংসার চালিয়ে অনেক টাই খুশিতে আছি। তমলুকে জেলা শাসকের দপ্তর এর পাশেই সাঁতরা কেবিনের ব্যবসায়ী চন্দন সাঁতরা। তিনি বলেন, অত্যন্ত মিশুকে স্বভাবের নিয়তি দেবী। পরনে আটপৌরে শাড়ি পড়া ওই গ্রামের বধূ কে দেখে প্রথমদিকে খুব আশ্চর্য্য লাগতো। কারণ এমনিতেই শহরের বুকে মহিলা টোটো চালকের ভূমিকায় তেমন কাউকে আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। কিন্তু তারপরেও অনেকটা সাহস এর সঙ্গেই এই পেশায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়া এবং জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলা সত্যিই বাহবার বিষয়।