২০১৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক কয়েকদিন আগে প্রকাশ্যে এসেছিল এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ স্টিং অপারেশন। যা রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিকে। পরবর্তীকালে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই নারদা কান্ডের তদন্তভার হাতে নেয় সিবিআই। তারপর কেটে গিয়েছে চার চারটি বছর। যদিও এখনও এই মামলায় চার্জশিট জমা দিয়ে উঠতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যদিও প্রায় এক বছর আগেই নারদা মামলায় চার্জশিট দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল বলে সিবিআই সূত্রে খবর। তবুও কেন এখনও চার্জশিট জমা দিতে পারেননি তদন্তকারী আধিকারিকরা? এই প্রশ্ন নিয়েই আজ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন স্টিং অপারেশনের মূল কান্ডারী সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল। নরদা কর্তার হয়ে আজ আদালতে সওয়াল করবেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
নারদ কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল সোমবার বলেন, “আদালত আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলো স্টিং অপারেশন এর সাথে জড়িত সমস্ত নথিপত্র, ল্যাপটপ পেনড্রাইভ সবকিছু আদালতে জমা দিতে। আমি আদালতের নির্দেশ মেনে সবকিছু জমা দিয়েছিলাম। এরপর আদালত আমাকে সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকদের সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেয়, আমি তাও যথাসময়ে পালন করেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই মামলা কোন গতি পেল না কেন, তা জানার অধিকার আমার আছে। সেই অধিকার থেকেই আজ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছি”। পাশাপাশি ক্ষুব্ধ ম্যাথুর দাবি, “তদন্ত না এগোলে আমার ল্যাপটপ, পেনড্রাইভ সহ সব নথিপত্র ফেরত দেওয়া হোক”। কিন্তু প্রশ্ন হল, তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর চার বছর কেটে গেলেও এখনও নারদা মামলায় কেন চার্জশিট দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা? সিবিআই সূত্রে খবর, নারদা মামলার চার্জশিট দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রায় এক বছর আগেই। কিন্তু কেন্দ্র- রাজ্যর অনুমতি জটে পড়েই গতি শ্লথ হয়েছে এই তদন্তের। এক সিবিআই আধিকারিকের দাবি, রাজ্য সরকারের থেকে এই মামলার তদন্তে কোনো রকম সহযোগিতা প্রথম থেকেই মেলেনি। পাশাপাশি রাজ্যের মন্ত্রী এমএলএ-দের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিতে হলে রাজ্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সেই অনুমতি বারবার চেয়েও মেলেনি। আইনজীবীদের বক্তব্য, কোনও রাজ্যের যে কোনো সরকারি কর্মী, আমলা বা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার চার্জশিট দিতে হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অনুমতি প্রয়োজন। পাশাপাশি কেন্দ্রের কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে হলেও কেন্দ্র সরকারের অনুমতি আবশ্যক। এক্ষেত্রে সেই অনুমতি জটেই আটকে রয়েছে নারদা তদন্তের চার্জশিট।
২০১৬ সালে প্রকাশিত নারদ স্টিং অপারেশনে রাজ্যের শাসক দলের একাধিক সাংসদকে টাকা নিতে দেখা যায়। পরবর্তীকালে তদন্ত শুরু করে অভিযুক্তদের ভয়েস স্যাম্পেল বা কণ্ঠস্বরের নমুনাও সংগ্রহ করে সিবিআই। পরে তা পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরীতে। সিবিআই সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের সবারই কণ্ঠস্বর এর নমুনা মিলে গিয়েছে এবং তদন্তে অধিকাংশের বিরুদ্ধেই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। ফলে মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে বাধা নেই তদন্তকারী আধিকারিকদের। তবে নিয়ম অনুযায়ী সাংসদদের বিরুদ্ধেও চার্জশিট দিতে হলে লোকসভার স্পিকারের অনুমতি প্রয়োজন। সিবিআইয়ের দাবি, লোকসভার অধ্যক্ষের অনুমতি অনেকদিন আগেই চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এরপর কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের কাছে আইনি পরামর্শ চেয়ে পাঠান লোকসভার অধ্যক্ষ। যদিও তারপরে আর এই প্রক্রিয়া এক পাও এগোয়নি। ফলস্বরূপ হাত গুটিয়ে বসে অপেক্ষা করা ছাড়া কার্যত আর কোনো উপায় নেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। সিবিআই সূত্রে খবর, আজ কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই এর কাছে এই বিষয়ে জবাবদিহি চাইলে, অনুমতি জটের কথাই আদালতকে সবিস্তারে জানাবেন তদন্তকারী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীরা। এরপর আদালতের নির্দেশের উপরেই নির্ভর করবে নারদা মামলার ভবিষ্যৎ।