March 15, 2025

TV Bangla New Agency

Just another WordPress site

বিশ্বের দরবারে কুশমণ্ডির মুখোশ শিল্পে করোনার থাবা

কুশমণ্ডি, ২৪ জুলাই ঃ- লকডাউনে মুখ থুবরে পড়েছে কুশমন্ডি মুখোশ শিল্প। করোনা পরিস্থিতিতে মুখোশ ( মাক্স ) যুক্ত সমাজে সমস্যায় কুশমন্ডির মহিষ বাথানের শিল্পীরা। বাজার বন্ধের ফলে চাহিদা বা বায়না কম থাকায় হস্তশিল্প ছেড়ে শিল্পীরা বাধ্য হয়ে হাত লাগাচ্ছেন কৃষি কাজে। বিশ্ববাজারে প্রসিদ্ধ কুশমন্ডি মুখোশ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে যুবসমাজের শিল্পীরা।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রাচীন শিল্পকলা কুশমণ্ডির মুখোশ শিল্প। জেলার গোমিরা নৃত্য মুখোশগুলি রাজবংশীদের দেশী ও পোলি সম্প্রদায়ের বিদ্বেষমূলক আচরণ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। মূলত, গ্রামাঞ্চলে কৃষি কাজে ফসল কাটার মৌসুমে ‘অশুভ শক্তি’ তাড়াতে এবং গমিরা নৃত্য বা মুখ খেলা ‘ভাল বাহিনী’ উৎসাহিত করতে এই মুখোশের উৎপত্তি। এলাকার রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এই কাঠের মুখোশগুলি ঐতিহ্যগতভাবে উপাসনা এবং নিষ্ঠার বস্তু। গোমিরা নৃত্যে দুটি চরিত্র “বুড়া-বুড়ি” যা শিব ও পার্বতী রূপে মানা হয়। এছাড়াও গোমিরা নৃত্যশিল্পীদের জন্য নানা ধরনের কাঠের মুখোশ তৈরি করা হয়।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমণ্ডির ব্লকের মহিষবাথান, উষাহরণ, বেরাইল, দেহাবন্দ বিভিন্ন গ্রামগুলিতে ঐতিহ্যবাহী এই মুখোশ গুলি তৈরি করা হতো। একটি কাঠের পিন্ডকে ছেনি হাতুড়ি দিয়ে কেটে শিল্পীরা তৈরি করেন মুখোশ। এমনকি বাঁশ কেটেও তৈরি করা হয় নানান মুখোশ ও কারুকার্য। ঐতিহ্যবাহী প্রথা ধরে রাখার পাশাপাশি হস্ত শিল্পকে তুলে ধরতে তৈরি হয় মহিষবাথান গ্রামীণ হস্তশিল্প সমবায় সমিতি। মাত্র ২৭ জন শিল্পী নিয়ে পথা চলা শুরু হয়েছিল কুশমণ্ডির মহিষ বাথানের। হস্ত শিল্পকে তারা জীবিকা হিসেবে বেছে নেয়।
পরে সেই সংখ্যা ৫০০ ছাড়ায়। শুধুমাত্র জেলা নয় মহিষ বাথানের মুখোশ শিল্পের খ্যাতি জেলা ছাড়িয়ে দেশ বিদেশে ছড়িয়েছে। একটা সময় এই পেশার সঙ্গে যুক্ত বেশির ভাগ মানুষ পেট চালানোর জন্য ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে চলে যেত। তবে বিশ্বের বাজারে এই শিল্প বিশেষ খ্যাতি অর্জন করায় ফের একবার নতুন প্রজন্ম এই শিল্পমুখী হয়।

২০১১ সালে রাজ্যে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর শিল্পী ও শিল্পকলার উপর বিশেষভাবে নজর দিতে শুরু করে। রাজ্য সরকার প্রাচীন এই শিল্পকলাকে পুনরুজ্জীবিত করতে শুরু থেকেই তৎপর। দক্ষিণ দিনাজপুরের এই শিল্পের উন্নতির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এক গুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের তরফে শিল্পীদের দেওয়া হয় পরিচয় পত্র। ২০১৩ সাল থেকে শিল্পকলা গুলি জনসমক্ষে তুলে ধরতে রাজ্য সরকার ও বাংলা নাটক ডট কম মুখা মেলার আয়োজন করে। এছাড়াও বিশ্ববাজারে শিল্পীদের শিল্পকলা গুলি তুলে ধরার ব্যবস্থা করে বাংলা নাটক ডট কম। জেলার শিল্পীরা তাদের তৈরি মুখোশ নিয়ে যায় কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই এর বিভিন্ন জায়গার মেলায়। এমনকি দক্ষিণ দিনাজপুরের মুখোশ শিল্পী শংকর দাস তার শিল্পকলা নিয়ে ছয় বছর আগে পাড়ি দেয় লন্ডনে। রাজ্য বা দেশ নয় কুশমণ্ডির মহিষ বাথানের এই মুখোশ শিল্প আজ বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গেছে। মহিষ বাথান গ্রামীণ হস্তশিল্প সমবায় সমিতি বাড়িয়েছে তার পোশাক সমিতিতে তৈরি হয়েছে তিন তলা বিল্ডিং। পর্যটকদের থাকার জন্য ঘর সহ শিল্পকলা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ফের সমস্যায় পড়েছে মহিষবাথান এর মুখা শিল্পীরা। নানান মেলা ও বাজার বন্ধ থাকায় বিক্রি হচ্ছেনা মুখোশ। নতুন করে বায়না বা অর্ডার দিচ্ছেনা ক্রেতারা। ফলে এক প্রকার কাজ বন্ধ মুখা শিল্পীদের। বাধ্য হয়ে হস্তশিল্প কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে নতুন প্রজন্ম। এমনকি লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল মহিষবাথান গ্রামীণ হস্তশিল্প সমবায় সমিতি। গত ২ রা জুলাই থেকে ফের কাজ শুরু হলেও শিল্পীর সংখ্যা হাতেগোনা। অর্ডার না থাকায় ঢিমেতালে চলছে কাজ।

মুখোশ শিল্পী লটাই চন্দ্র সরকার জানান, এখানে কাজ শিখেছি। করোনা পরিস্থিতির জন্য কাজ প্রায় বন্ধ। অর্ডার পেলে কাজ করছি, মেলা আর করা হচ্ছে না। সংসার চালাতে এই কাজে অর্থ উপার্জন কম হওয়ায় কৃষিকাজে হাত লাগাচ্ছি।
শিল্পী কল্যাণ চন্দ্র সরকার জানান, আমরা এখানে শংকর সরকারের কাছে কাজ শিখেছি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ নিয়ে গেছি, কিন্তু বর্তমানে লকডাউন থাকায় সব মেলা বন্ধ। সরকারের তরফ থেকে একসময় সায়েন্স সিটিতে এবং পরে বিশ্ববাংলা হাটে শিল্পকলা প্রদর্শনী করা ও বিক্রি করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ৮০০ থেকে ৮০০০ টাকায় বিভিন্ন মাপের মুখোশ বিক্রি করেছি। বাংলা নাটক ডট কমের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজের অর্ডার আসতো কিন্তু বর্তমানে লকডাউন পরিস্থিতিতে সব বন্ধ। ফলে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা কাজে এসেও ফিরে যাচ্ছে। সমস্যায় রয়েছি মুখোশ শিল্পীরা।